কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে চার লেনের টানেল। টানেল দিয়ে চলাচল করা গাড়িগুলো আউটার রিং রোড হয়ে দড়্গিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাটের কাছে এসে মিলিত হবে পোর্ট এক্সেস রোডের সাথে। পরবর্তীতে পোর্ট এক্সেস রোড হয়ে ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোডের সাথে মিলিত হবে গাড়িগুলো। কিন’ পোর্ট এক্সেস রোডটি দুই লেনের। এতে ছয় লেনের গাড়িগুলোকে চলাচল করতে হবে দুই লেনের রোড দিয়ে। আর তা নিয়ে মহাচিনত্মায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপড়্গ।
বন্দর কর্তৃপড়্গের চিনত্মার কারণ কেন?
আউটার রিং রোডের সাথে সাগর পাড়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে বে টার্মিনাল। আর এই বে টার্মিনাল থেকে কনটেইনার ডেলিভারি দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বন্দর কর্তৃপড়্গ। সেই অনুযায়ী কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বন্দর থেকে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি পণ্য নিয়ে চলাচল করে। এই গাড়িগুলো পোর্ট এক্সেস রোড দিয়ে ঢাকার দিকে চলাচল করবে। কিন’ পোর্ট এক্সেস রোড তো দুই লেনের।
এ বিষয়ে
বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপড়্গের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিউল আলম বলেন, ‘এখন তো অনেক ট্রাক কাভার্ডভ্যান পণ্য নিয়ে পোর্ট কানেকটিং রোড দিয়ে চলাচল করে। কিন’ বে টার্মিনাল থেকে যখন কনটেইনার ডেলিভারি দেয়া হবে তখন শতভাগ গাড়ি চলাচল করবে পোর্ট এক্সেস (টোল রোড) রোড দিয়ে। তখন মাত্র দুই লেনের পোর্ট এক্সেস রোড দিয়ে এসব যানবাহন কিভাবে চলাচল করবে?’
তিনি বলেন, দুই লেনের পোর্ট এক্সেস রোডকে এখনই সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে বিশাল দুর্ভোগে পড়তে হবে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে শেষ হবে আউটার রিং রোডের কাজ, শেষ হতে চলছে টানেলের কাজ। এই রোডেও গাড়ির চাপ বাড়বে। আর সকল গাড়ি রাসমনি ঘাটের কাছে এসে দুই লেনের সাথে মিলিত হবে।
বন্দর কর্তৃপড়্গের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফৌজদারহাট থেকে বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পর্যনত্ম ১৩ কিলোমিটার রোডটি বন্দর কর্তৃপড়্গ নিজেরাই ছয় লেনে উন্নীত করতে চায়। কিন’ সড়ক ও জনপথ বিভাগ তা বন্দরকে দিতে নারাজ। এনিয়ে কয়েকদফা চিঠি চালাচালি হলেও বন্দর কর্তৃপড়্গ তা বুঝে পাচ্ছে না। শিগগিরই নৌ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয় আনত্মঃসভায় বসতে যাচ্ছে তা নিয়ে।
আউটার রিং রোড শেষে বাড়বে গাড়ির চাপ
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপড়্গের (সিডিএ) আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সংস’াটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পোর্ট এক্সেস রোডকে এখনই ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরম্ন করতে হবে। আমাদের রিং রোড আগামী জুনে শেষ হয়ে যাবে। তখন এই রোডে যানবাহনের চাপ বাড়বে। আমাদের রোডটি দড়্গিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাটের কাছে এসে পোর্ট এক্সেস রোডে মিলিত হয় দুই লেনের মাধ্যমে তা ফৌজদারহাটে গিয়ে মিলিত হবে। এতে সৃষ্টি হবে প্রবল যানজট।
তিনি আরো বলেন, আউটার রিং রোডের সাথে যুক্ত থাকবে টানেল। তাহলে টানেল দিয়ে কক্সবাজারমুখী গাড়ির চাপ থাকবে। সব গাড়ি ডিটি রোডের সাথে এক পর্যায়ে দুই লেনের মাধ্যমে গিয়ে মিশবে। এতে বাড়বে যানজট দুর্ভোগ।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বক্তব্য
বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী সাগর পাড়ের আউটার রিং রোডের গাড়ি পোর্ট এক্সেস রোডের সাথে যুক্ত হয়ে ফৌজদারহাটে গিয়ে মিশবে। ফলে ছয় লেনের ( আউটার রিং রোড চার লেন ও পোর্ট এক্সেস রোড দুই লেন) গাড়িগুলো দুই লেন দিয়ে চলাচল করতে হবে। এবিষয়ে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন,‘ আমরা এই রোডটিকে আট লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নিয়েছি। প্রকল্পটি পস্ন্যানিং কমিশনের অনুমোদনের অপেড়্গায় রয়েছে। পস্ন্যানিং কমিশনের অনুমোদনের পর একনেক থেকে অনুমোদন পেলেই আমরা এর নির্মাণ কাজ শুরম্ন করতে পারবো। ইতিমধ্যে এর সার্ভে ও পরিকল্পনার কাজ শেষ হয়ে আছে।’
কিন’ আউটার রিং রোড চালু হওয়ার আগে এটি আট লেনে উন্নীত করনের কাজ শুরম্ন না হলে সমস্যা হতে পারে। এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের সমস্যা হতে পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দেখে আমরা ফৌজদারআট প্রানত্ম থেকে আগে কাজ শুরম্ন করবো। তাহলে আউটার রিং রোডের চার লেনের সাথে দ্রম্নত যুক্ত হওয়া যাবে এবং দুর্ভোগ কমে আসবে।
সমস্যার মূলে চার কিলোমিটারের দুই লেন সড়ক
পোর্ট এক্সেস রোডের ফৌজদারহাট থেকে দড়্গিণ কাট্টলী পর্যনত্ম দূরত্ব চার কিলোমিটার। এই চার কিলোমিটার সড়কটি দুই লেনের। পতেঙ্গা থেকে আসা আউটার রিং রোড দড়্গিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাটের কাছে এসে পোর্ট এক্সেস রোডের দুই লেনের সাথে যুক্ত হবে। এখন দড়্গিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট থেকে ফৌজদারহাট পর্যনত্ম চার কিলোমিটার সড়কটি সম্প্রসারণ করা না হলে সমস্যা বাড়বে। এবিষয়ে চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘অবশ্যই বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে বের হওয়ার রাসত্মা চওড়া হতে হবে। যদি চওড়া না হয় তাহলে গাড়ি বের হতে পারবে না, দীর্ঘ সময় ধরে পণ্য আটকে থাকবে। এতে দুর্ভোগ আরো বাড়বে। তাই যতো দ্রম্নত সম্ভব পোর্ট এক্সেস রোডের সম্প্রসারণ প্রয়োজন।’
উলেস্নখ্য, ৮০ এর দশকে বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্পের উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে নির্মাণ হওয়া দুই লেনের পোর্ট এক্সেস রোডটি (টোল রোডটি) নির্মাণ করেছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে ৯২ শতাংশ পণ্য পরিবহন করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য সাগরের পাড় দিয়ে ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি পর্যনত্ম নির্মিত হয় টোল রোড বা পোর্ট এক্সেস রোডটি। বন্দরমুখী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ও প্রাইম মুভারগুলোকে টোল দিয়ে যাতায়াত করে এই রোড দিয়ে।