যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত শামিমা নূর পাপিয়া ওয়েস্টিন হোটেলে অবস্থানকালে কারা কারা তার কাছে যেতেন, তাদের নামের তালিকা হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পাপিয়ার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মামলাটি এখন ডিবি তদন্ত করছে।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল শনিবার জানান, ওয়েস্টিন হোটেলে অবস্থানের সময় পাপিয়া কার কার সঙ্গে দেখা করেছেন বা তার কাছে কারা কারা আসতেন, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সিসি ফুটেজসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হোটেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই হোটেলে তিনি কীভাবে বিল দিতেন, তার ক্যাশমেমোও চাওয়া হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে।
পাঁচ তারা ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল সু্যুট, যার প্রতি রাতের ভাড়া ২ হাজার ডলারের মতো। র্যাবের দাবি ওই স্যুট ভাড়া করে পাপিয়া যৌনবাণিজ্য চালাতেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল জানিয়েছিলেন, পাপিয়ার নামে ওই হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট সব সময় বরাদ্দ থাকত। হোটেলে নিয়মিত কয়েকজন তরুণী থাকত, যারা তার ‘কাস্টমারদের’ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করত। এজন্য তাদের মাসিক বেতন বরাদ্দ ছিল।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেক হোমরা-চোমরা রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীর সঙ্গে পাপিয়ার যোগাযোগ ছিল, তাদের মধ্যে হোটেলের মালিকানা ও পরিচালনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও আছেন।
‘দি ওয়েস্টিন ঢাকা’ ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্টের একটি হোটেল, যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ব্যবসায়ী নূর আলী। তার সঙ্গে পাপিয়াসহ তার সঙ্গী তরুণীদের সঙ্গে নূর আলীর একটি ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তবে ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের দাবি পাপিয়ার কারবারের বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না।
পাপিয়া গ্রেপ্তারের পর ওয়েস্টিনের মার্কেটিং কমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী পরিচালক সাদমান সালাহউদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, উনি (পাপিয়া) আমাদের স্যুট ভাড়া নিয়েছিলেন। এটা বিশাল আকারের তো, উনার গেস্টরা সেখানে ছিলেন। তিনি কাদেরকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করেছেন কিংবা কতজন ছিলেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাবলিকলি প্রকাশ করা হোটেলের নিয়ম পরিপন্থি। তবে পাপিয়ার বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. শাকের আহমেদ।
এদিকে গতকাল শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে আমরা তা তদন্ত করছি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা এবং ক্রিমিনাল অপরাধগুলো চিহ্নিত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব শেরেবাংলা নগর থানায় দুটি এবং বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। বিমানবন্দর থানায় মামলাটি করা হয় জালমুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায়। অস্ত্র ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অন্য মামলা দুটি হয়। বর্তমানে বিমানবন্দর থানার মামলায় ডিবিতে রিমান্ডে রয়েছেন পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী (মতি সুমন)।
ডিবি উত্তরের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান জানান, মামলার তদন্তের প্রয়োজনে যে সব তথ্যের প্রয়োজন তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব ব্যাপারে পুরো তথ্য সংগ্রহ করে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, পাপিয়ার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, আমরা তা তদন্ত করছি। অভিযোগের সত্যতা এবং ক্রিমিনাল অপরাধগুলো চিহ্নিত করছি। ডিবির আগে এই মামলার তদন্তে থাকা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক কায়কোবাদ কাজী রিমান্ডের প্রথম দিন পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের ‘কিছু শীর্ষ নেতার সঙ্গেও’ পাপিয়ার সম্পর্ক ছিল। তবে এই সম্পর্ক সাংগঠনিক নাকি একান্তই ব্যক্তিগত পর্যায়ের, সে বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।
এদিকে পাপিয়া গ্রেপ্তারের পর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে র্যাব। র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ভিডিও ফুটেজসহ পাপিয়ার কর্মকাণ্ডের বেশ কিছু আলামতও পেয়েছেন। তদন্তের দায়িত্ব পেলে তা যাচাইয়ে কাজ করবেন। আবার যে সব তরুণী পাপিয়ার সঙ্গে ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেও নানা তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
এদিকে পাপিয়ার বাসায় অস্ত্র ও মদ পাওয়ার মামলা দুটি এখনো শেরেবাংলা নগর থানার হাতে রয়েছে, সেগুলো তদন্তের জন্য এখনো ডিবিতে যায়নি। এ বিষয়ে শেরে বাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ গতকাল শনিবার জানান, মামলা দুটির তদন্তভার তাদের হাতেই থাকলে আজ রবিবার ওই দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাপিয়াকে থানায় আনা হবে। পাপিয়াকে তিনটি মামলায় পাঁচ দিন করে ১৫ দিন জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
