সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) সঙ্গে ফিঙ্গার প্রিন্ট না মেলায় বিড়ম্বনায় পড়েন অসংখ্য ভোটার। শুধু আমজনতাই নয়, অনেক ভিআইপি ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্টও শনাক্ত করতে পারেনি ইভিএম। এর মধ্যে ৪-৫ বারের চেষ্টায়ও ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলেনি প্রবীণ রাজনীতিক ড. কামাল হোসেনের। একই কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেখিয়ে ভোট দিয়েছেন খোদ সিইসি কে এম নুরুল হুদা। ফিঙ্গার প্রিন্ট না মেলায় অনেকে ভোট দিতে পারেননি- এমন অভিযোগও রয়েছে। এটাকেই সিটি নির্বাচনে ভোটের হার কমার একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা-১০ উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেই সংশ্লিষ্ট পাড়ায়-মহল্লায় বুথ করে বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলানোর (আপডেট করা) উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির এনআইডি শাখার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম ভোরের কাগজেকে জানান, চট্টগ্রাম উপনির্বাচন ও ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অনেকের ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলেনি। যা দুঃখজনক। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদারও ফিঙ্গার প্রিন্ট না মেলায় ইভিএম মেশিন ওপেন করে তাকে ভোট দেবার সুযোগ করে দিতে হয়। এ নিয়ে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসাররা পড়েন মহাবিড়ম্বনায়। এতে সময়ক্ষেপণ যেমনি হয় তেমনি ইভিএম নিয়ে ভোটাররা আরো সন্দিহান হয়ে পড়েন। সেজন্যই ২১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা-১০ উপনির্বাচন এবং ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে কেন্দ্রে কেন্দ্রে মক ভোটিংয়ের আয়োজন করবে ইসি। প্রয়োজনে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইভিএমে ফিঙ্গার মিলিয়ে নেবার ব্যবস্থা করা হবে। কেননা, এ দুটি নির্বাচনেও আমরা সম্পূর্ণ ইভিএম ব্যবহার করব।
ফিঙ্গার প্রিন্ট না মেলার কারণ কি? এ প্রশ্নের জবাব হিসেবে সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৮-১০ বছর আগে এ ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। যা বিভিন্ন কাজ কর্মে বা আঙুলের দাগের ক্ষয়ের কারণে কিছুটা বদলে যেতে পারে। তাই হয়তো মেশিন শনাক্ত করতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, আমাদের ভোটারদের একটা বিরাট অংশ শ্রমজীবী, তারা নানা কাজেই আঙুল ব্যবহার করেন। সেজন্য এদের আঙুলের ছাপ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিকে ভোট প্রদানের হার ছিল ২৫.৩ শতাংশ, আর দক্ষিণ সিটিতে ছিল ২৯.৪ শতাংশ। অর্থাৎ এ দুই সিটিতে ভোটের গড় হার ছিল ২৭.১৫ শতাংশ, যা নিয়ে অসন্তোষ জানান সিইসিসহ ইসি সচিব। এ নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে ১০ আবার কোনো কেন্দ্রে ২০ শতাংশ ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলেনি। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহায়তায় এমন প্রায় ২০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পেরেছেন। যা নিয়ে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনেছে বিএনপিসহ অংশ নেয়া অন্য দলগুলো।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ফিঙ্গার প্রিন্ট না মেলা ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ভোট দিতে না পেরে অনেকে ফিরে যান। ওই নির্বাচনেও মাত্র ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, ভোটের হার হতাশাজনক হলেও ভোটার আনার দায়িত্ব ইসির নয়। আর ফিঙ্গার ৮-১০ বছর আগের নেয়া বলে অনেকের তা মেলেনি। আর ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, ভোটের এ হারে আমরা সন্তুষ্ট নই। ভবিষ্যতে ভোটাররা যাতে ভোট দিতে আসেন সে জন্য প্রচার চালানো হবে। আর ফিঙ্গার প্রিন্ট আপডেটের চিন্তা করছে কমিশন।