পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক হিসাব কেন্দ্রের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি দুর্নীতির টাকায় বনেছেন বিপুল সম্পদের মালিক। একই জায়গায় বছরের পর বছর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছেন। এ সুযোগে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের বিল পরিশোধ তথা চেক ছাড়ের ক্ষেত্রে ‘কমিশন বাণিজ্য’ করেন।
নির্দিষ্ট কমিশন দিলেই তিনি চেক ছাড় করেন। নয়তো নানা অজুহাতে আটকে রাখেন। ঠিকাদারদের মাসের পর মাস ঘোরান। কতিপয় প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই কালাম পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছেন। বোর্ডের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কালাম এক সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিএনপি সমর্থিত সিবিএ করতেন। তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ কর্মকর্তারাই তাকে অফিসার হিসেবে পদোন্নতি প্রদানে সহায়তা করেন। কিন্তু দেখা গেছে, পরে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার চেয়ারে বসে নতুন করে ঠিকাদারদের হয়রানি শুরু করেন।
কেবল ঠিকাদার নয়; অফিসের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন আর্থিক বিষয় নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও কালাম নানা টালবাহানা করেন ঘুষ আদায়ের জন্য। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে নব্য আওয়ামী লীগার সেজে এখন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন। একই স্থানে একযুগেরও বেশি সময় ধরে কিভাবে কালাম মজুমদার বহাল আছেন তাও অনেকের কাছে এক প্রকার বিস্ময়।
সূত্র জানান, কালাম পানি উন্নয়ন বোর্ডে পিয়ন হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। মাঝে কিছু দিন কক্সবাজারে ডেপুটি ডাইরেক্টর (অতিরিক্ত) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ব্লক বসানো, খাল খনন, ছড়ার উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে সরকার যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমেই করা হয়। সাধারণত নির্বাহী প্রকৌশলীরাই প্রকল্প গ্রহণ, প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে।
হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কালামের হাত দিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়নের কোটি কোটি টাকার চেক ছাড় হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, প্রতিটি চেকের বিপরীতে কালাম মজুমদারকে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। না হলে চেক ছাড় করেন না। মাসের পর মাস তার পিছে পিছে ঘুরতে হয়। তা ছাড়া তাকে নিয়মিত অফিসে পাওয়াও যায় না।
আরও অভিযোগ, ঘুষের টাকায় কালাম প্লট-ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদের মালিক বনেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের অদূরেই চান্দগাঁও ফরিদার পাড়ায় ‘ডিউর্যাবল মোরশেদ’ নামে বিলাসবহুল ভবনে কিনেছেন কোটি টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট। চার তলার এ ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন না। এছাড়া ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেয়া হয়েছে। নামে-বেনামে নগরীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আরও একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট। দুদকও এ ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খোঁজখবর নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইল আবুল কালাম মজুমদার বুধবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্য, দুর্নীতি ও হয়রানির যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। যারা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছে তাদের আমার অফিসে নিয়ে আসেন।’ দুর্নীতির মাধ্যমে প্লট-ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার অনেক কিছুই আছে। বাংলাদেশে ফ্রেশ মানুষ নেই।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক হিসাব কেন্দ্রের উপ-পরিচালক প্রশান্ত রায় যুগান্তরকে বলেন, ‘আবুল কালাম মজুমদারের বিরুদ্ধে কেউ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আমাদের করেননি। তবে তিনি অফিসে অনিয়মিত হওয়ার কারণে অনেকে তার ওপর ক্ষুব্ধ।’