সদ্য প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাত দুইটার দিকে ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই শিক্ষকের নাম কাজী জাহিদুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
পুলিশ জানায়, বুধবার রাত সাড়ে নয়টায় শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় মামলা করেন বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আইনজীবী তাপস কুমার সাহা। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাত দুইটার দিকে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন পূর্ব-১৩ নম্বর বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে থানার হেফাযতে রাখা হয়।
মতিহার থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কিছু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরের আগেই গ্রেপ্তার রাবি শিক্ষক কাজী জাহিদকে আদালতে পাঠানো পাঠালে তার জামিন চাওয়া হয়লে আদালত জামিন না মুন্জুর করেন । এর আগেও তিনি আইনজীবীদের নিয়ে বিভিন্ন খারাপ মন্তব্য করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জীবনসংকটে থাকাকালীন রাবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষক বলে পরিচিত কাজী জাহিদুর রহমান তার ফেসবুক পাতায় একাধিক পোস্ট দিয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় মন্তব্য লেখেন।
দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা সম্পর্কে অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হন রাজশাহীর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এমনকি শিক্ষকরাও এ প্রতিবাদে শামিল হন। জাহিদকে ক্ষমা চেয়ে তার মন্তব্য বিমোচন করারও দাবি তোলেন ও নিন্দার ঝড় প্রবল হয়ে ওঠে। এর পরও জাহিদ তার মন্তব্যে অনড় থাকলে বুধবার রাতে আইসিটি আইনে মামলাটি করেন আইনজীবী তাপস কুমার সাহা।
রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও ফয়সাল আহমেদ রুনু অভিযোগে বলেন, রাবি শিক্ষক কাজী জাহিদ জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে খুবই অশালীন ভাষায় বিষোদগার করেন নিজের ফেসবুক পাতায়। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গত ১৫ জুন রাবি ছাত্রলীগ ভিসি প্রফেসর এম সোবহানের কাছে স্মারকলিপি দেন।
এর আগে কাজী জাহিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, কাজী জাহিদের বাড়ি নড়াইলে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকালে জাহিদকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন রাবির বর্তমান ভিসি প্রফেসর এম আবদুস সোবহান।
তবে কাজী জাহিদ নিজ জেলা নড়াইল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। ওই জেলা কমিটিতে তিনি ছিলেন তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, ২০১৬ সালে। তবে মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে উগ্র ও কুরুচিপুর্ণ অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগে ১৬ জুন জাহিদকে তার পদ থেকে বহিষ্কার করেন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ।
এর আগেও জাহিদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন।