এম.ইউ শাকিল, নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
আইনের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে এসে আমরা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি এবং আজ আমাদের কোন পরিচয় নাই। কি যে দুর্বিষহ জীবন তা বুঝাতে পারবো না। সমাজে ও সন্তানের কাছে মুখ দেখাতে পারিনা, স্ত্রীর কাছে দাম পাইনা। আমার বাবা ও মা অসুস্থ, তাদেরকে ওষুধ কিনে দেওয়ার মত কোন ক্ষমতা আমার নেই। দুর্বিষহ জীবন থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমি যদি এই আন্দোলনে মরে যাই, তবে আমি আমার সহযোদ্ধাদের বলে যাবো, আমার লাশটা যেন বার কাউন্সিলকে দিয়ে দেয়। আমি যদি এই প্রফেশনে নাও আসতে পারি তবে আমার লাশের বিনিময়ে যেন আমার ভাই-বোনসহ পরবর্তী প্রজন্ম ঠিকমত পরীক্ষা পায়, আমি সেটাই চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন এই যে, আমার মৃত্যু পর্যন্ত আমি এখানে বসে থাকবো। সনদ না নিয়ে আমি এখান থেকে যাবো না, আমার লাশ যাবে।
আইনজীবী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সোনালী ব্যাংকের সামনে আমরণ অনশনরত শিক্ষানবিশ আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ অনশনের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার ( ৯ জুলাই) রাতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, মশার কামড়ে আমার কান ফুলে গেছে, শরীর প্রচ- ব্যথা করছে ও আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি যেকোন সময় আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। আমরা আইনের সর্বোচ্চ ডিক্রি অর্জন করার পরেও শুধুমাত্র সনদের জন্য রাস্তায় শুয়ে আছি, এর চেয়ে দুর্বিষহ জীবন আর কিছু হতে পারে না। আমাদের একটাই চাওয়া, আইনজীবী তালিকাভুক্তির ২০১৭ ও ২০২০ সালে এসসিকিউ পরীক্ষায় আমরা যারা উত্তীর্ণ হয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বার কাউন্সিলের যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাদের গেজেট করে সনদের ব্যবস্থা করেন। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে একটু তাকান, একটু সদয় হোন। তাহলে হয়তো আমার মত প্রায় ১৩ হাজার পরিবার বেঁচে যেতো। আমরা প্রাণখুলে আপনাকে দোয়া করতাম।
এদিকে বৃহস্পতিবার ( ৯ জুলাই) রাত ৯টার দিকে অনশনরত দুইজন নারী শিক্ষানবিশ আইনজীবী হাজেরা বেগম ও আফসানা মিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে গিয়ে মিডফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের।
এছাড়া অনশনের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও দিনভর অনশনস্থল ছিল শ্লোগানে মুখরিত। অনশনকারীদের মুখে শ্লোগান ছিল একটাই, তা হলো এই যে, ‘দাবি মোদের একটাই গেজেট করে সনদ চাই’
বিকেলে অনশনস্থলে আসেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এসময় তিনি অনশনের বিষয়টি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতিকে অবহিত করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে অনশনকারীদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু অনশনকারীরা তাতে রাজি হয়নি বরং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই স্থানেই অনশন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতির কারণে আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ৩ বছরেও এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন হয়নি। এজন্য ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা না নিয়ে সরাসরি গেজেট প্রদানের মাধ্যমে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তিকরণের দাবিতে গত মঙ্গলবার (৭ জুলাই) বিকেল থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সোনালী ব্যাংকের সামনে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা।