একে একে বেরিয়ে আসছে করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজির প্রতারণার ঘটনা। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি, শতাধিক ব্যক্তি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ করেছেন জেকেজির আরিফ ও ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় এবং ডা. সাবরিনার সঙ্গে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের পর আরিফকে কারাগারে পাঠিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আজ সাবরিনাকেও কারাগারে পাঠানো হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া একটি কথোপকথনে দেখা গেছে, ডা. সাবরিনা বলছিলেন, ‘আমি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা বলছি। আপনাদের কোম্পানিতে কতজন শ্রমিক আছে।’ অপর প্রান্ত থেকে এসকেএফ ফার্মার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলছিলেন, ‘সাত শতাধিক শ্রমিকের করোনা টেস্ট করাতে চাই। ঠিক আছে বলে, ডা. সাবরিনা তাকে বলেন, ‘জনপ্রতি দুই হাজার টাকা লাগবে।’ তখন নজরুল ইসলাম তাকে বলেন, ‘দেখুন আপা, যেখানে সরকারিভাবে করোনা টেস্ট করতে কোনো টাকাই লাগে না আপনি কেন এত টাকা দাবি করছেন?’ তখন ডা. সাবরিনা বলেন, ‘ঠিক আছে দুইশ টাকা কমে জনপ্রতি ১৮০০ টাকা করে দিয়েন। আমি প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি।’
টঙ্গীর এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৭০০ শ্রমিকের করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) শনাক্ত করতে ১২ লাখের বেশি টাকা নেয় জেকেজি হেলথ কেয়ার। টেস্টে ৭০ জনের পজিটিভ বাকিদের নেগেটিভ ধরা পড়লে ওই ৭০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখে কর্তৃপক্ষ। ১৪ দিন পর ফের তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিভার ক্লিনিকে পরীক্ষা করালে সবার নেগেটিভ আসে। নজরুল ইসলাম বলেন, এখন গণমাধ্যমে দেখছি প্রতিষ্ঠানটি করোনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রতারণা করেছে। এখন মনে হচ্ছে আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ডা. সাবরিনা ও তার স্বামীসহ এই কাজে আরও যারা জড়িত রয়েছেন তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। একইভাবে জেকেজির প্রতারণার শিকার কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সবাই জেকেজি হেলথ কেয়ারে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করে প্রতারিত হয়েছি। করোনা টেস্টের কথা বলে প্রতিষ্ঠানটিকে ৪৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এতে তেজগাঁও থানায় একটি মামলাও করেছি। সাবরিনারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। দোষীরা শাস্তি পাক এটা আমি চাই।’ এ ছাড়া চাইনিজ নাগরিকসহ মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কয়েকশ শ্রমিককে করোনা টেস্টের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পেয়েছে ডিবি। জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গতকাল বলেন, করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া জেকেজি (জোবেদা খাতুন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা) চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী মামলা সাজানো হবে। তারা কোন কোন প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতি করেছে সে বিষয়ে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। তাছাড়া তাদের কম্পিউটারেও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে যথেষ্ট বলে মনে করছে মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ডিবি)। তিনি বলেন, আরিফ ও সাবরিনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির প্রয়োজন নেই। তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হবে। আজ জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার জাফর হোসেন বলেন, রবিবার বিকালে আরিফ ও তার ভগ্নিপতি সাঈদ চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হয়। পুনরায় রিমান্ড আবেদন না থাকায় তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। আরিফ ও সাঈদের জেলহাজতে পাঠানোর আবেদনের বিরোধিতা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। তাদের আবেদন খারিজ করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ডা. সাবরিনা চৌধুরীর দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ আদালতে পাঠানো হবে। গতকাল ছিল তার দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডের শেষ দিন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কারাগারে পাঠানোর আবেদন জানিয়ে আজ আদালতে পাঠানো হবে। প্রসঙ্গত, করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৩ জুন জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানটির ছয় কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গত ১২ জুলাই জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনাকে গ্রেফতার করে।