স্বপ্ন ভাঙার গল্প-(৩)
এম.ইউ শাকিল ॥
শিক্ষানবিশ আইনজীবী উত্তম কুমার তারণ বলেছেন, আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য অন্য পেশা ছেড়ে দিয়ে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ পূর্বে আমি যে পেশায় যুক্ত ছিলাম তা আমার ছেলে-মেয়েরা পছন্দ করেনা। এদিকে এলএলবি পাশ করার পর নিয়মিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় শুধুমাত্র আইনজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পেতেই আমার জীবন থেকে ৭ বছর চলে গেছে। ২০১৭ সালে আমি লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম এবং এতোটাই কনফিডেন্স ছিলো যে, যদি ১০০ জনও পাস করে আমি পাস করবো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বিজ্ঞ এডভোকেট হিসেবে স্বীকৃতি পেলামনা। এখন আমি হচ্ছি শিক্ষানবিশ আইনজীবী। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, আমার খাতা দেখালে কোন এক্সজামিনার আমাকে ফেল করে দিতে পারবেন না। এর বিরুদ্ধে রিভিউ করি কিন্তু বার কাউন্সিল খাতা দেখাতে পারেনি। অন্যদিকে আমি ল’ পড়ার পাশাপাশি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তপ্রত্যার্শী শিক্ষার্থীদের পড়াই। আমার কোচিং থেকে ২০১৭ সালে ৪০ জন শিক্ষার্থী আইনজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমার ৭৫% শিক্ষার্থী ২০২০ সালে এমসিকিউ পরীক্ষায় পাশ করেছে। বার কাউন্সিলের অনিয়ম নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাইনা। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই যে, বার কাউন্সিল যেহেতু পরীক্ষা নিতে পারবেন না। আমাদের আইডেন্টিটির স্বার্থে ছেলে-মেয়েরা যাতে তার পিতার পরিচয় দিতে পারে এজন্যে এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সরাসরি গেজেট করে সনদ দিয়ে দেওয়া হোক। যদি বাংলাদেশে অ্যাডভোকেট বেশী হয়ে যায় তবে এই পেশায় থেকে সাবেক অ্যাডভোকেটদের রুটি-রুজিতে ভাগ বসাবোনা। আইনের বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করে এবং আমার পূর্বতন পেশায় ফিরে যাবো। পাশাপাশি যতদিন বেঁচে থাকবো আইনের শিক্ষার্থীদের অ্যাডভোকেট হতে সর্বোচ্চ মেধা বিলিয়ে যাব। আমার কিছু না হোক অন্যদের আইনজীবী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে যাব।
সোমবার (২০ জুলাই ) সকালে রাজধানীর বাংলামটরে বার কাউন্সিল অস্থায়ী কার্যালয় বোরাক টাওয়ারের সামনে প্রতীকী অনশন চলাকালে তিনি এসব কথা বলেন ।
তিনি আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুকি নিয়েই আমরা গত ১৪ দিন যাবৎ প্রতীকী অনশন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরবো না। বার কাউন্সিল অস্থায়ী কার্যালয় বোরাক টাওয়ারের সামনে খোলা আকাশের নিচে প্রখর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও কাফনের কাপড় পড়ে প্রতীকী অনশন, সমাবেশ করলেও এখন পর্যন্ত বার কাউন্সিলের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আমাদের অনশনস্থলে আসেননি। আমরা বার কাউন্সিলকে ৭২ ঘন্টা আল্টিমেটাম দিয়েছি, এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আরো কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী উত্তম কুমার তারণ আরো বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে আত্ম নিয়োগ করি। প্লাবন ভূমিতে সামাজিক মাছ চাষ দাউদকান্দি মডেলের উদ্যোক্তা সংগঠক হিসাবে কাজ করি। যা বাংলাদেশে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। ফিসারিজ মিনিষ্ট্রি এটিকে বাংলাদেশে মডেল হিসাবে ঘোষণা করে। এই মডেলটি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি পায় এবং পুরস্কৃত করা হয়। প্রায় দেড় যুগ মাটি ও মানুষের সাথে কাজ করি। কিন্তু আমার ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে মাছের পেশাকে অপছন্দ করায় তা ছেড়ে দিয়ে আমি আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার জীবনের অধিকাংশ সময় এদেশের মানুষের আত্ম কর্মসংস্থানের জন্যে কাজ করেছি। হাজার হাজার মানুষ আমার প্রেরণায় আজ আত্ম নির্ভরশীল। কিন্তু আজ আমি নিজেই একটা কর্মসংস্থানের জন্যে এবং একটি আইডেন্টিটির জন্যে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমি যেহেতু আমার যৌবন দেশের জন্যে উৎসর্গ করেছি। বাকী জীবনটা আইন পেশায় যুক্ত থেকে এদেশের নির্যাতিত- নিপীড়িত মানুষের জন্যেই কাজ করে যেতে চাই। কিন্তু বার কাউন্সিলের আইনি বাধ্যবাধকতার শৃঙ্খলার কারণে থমকে গেছে আমার চলার পথ। যেদিন আমি ল’ পাস করেছি সেদিন থেকে প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা লেখাপড়া করি। আমি যা শিখি তা আবার সহপার্ঠীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বিতরণ করি।