লেখিকাঃ মিতা খাতুন,শিক্ষানবিশ আইনজীবী,খুলনা
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের PSC,JSC পরীক্ষার বাতিলের পর এ মাসের ৭ তারিখ দুপুরে HSC ও সমমানের পরীক্ষাও বাতিল করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ঘোষনা দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষনা দেন। শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান,এবার প্রচলিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন না করে JSC এবং SSC পরীক্ষার ফলের গড় করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। গতবার অংশগ্রহণ করে যারা অকৃতকার্য হয়েছিল তাদেরও একই পদ্ধতির ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।
চলতি বছর এইচ,এস,সি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। যার মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন। আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। বর্তমান বৈশ্বিক করোনা মহামারীর বিস্তার রোধ কল্পে HSC শিক্ষার্থীদের এমন অটোপাশ/প্রোমোশন দেওয়ার সিদ্ধান্তকে শিক্ষার্থী সহ তাদের অবিভাকরা সাধুবাদ জানিয়েছে। এমনকি দেশের সর্বস্তরের জনগন সরকারের প্রসংশাও করেছে। অপরপক্ষে,আইনজীবী তালিকাভূক্তির প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আওতাধীনে প্রিলিমিনারী পাশকৃতদের প্রায় ১৩ হাজার লিখিত পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষা নিতে পারেনি করোনা মহামারীর তান্ডব নীলার কারনে। পরীক্ষার্থীরা প্রায় ৩ বছর অতিক্রম করে একটা পরীক্ষা পেলেও কঠিন প্রশ্নের পরীক্ষায় সামান্য সংখ্যকেই প্রিলিমিনারী পাশ করেছে। এর পর পরেই শুরু হল করোনাকালীন টাইম। তাই এমনিতেই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সঠিক সময়ে পরীক্ষা হয় না তাতে আবার করোনার বিরতি সব মিলে শিক্ষার্থীরা আর পেনডিমিক টাইম সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ন্যায্য দাবী আদায়ে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে। আর আন্দোলনকে দমাতে বার কাউন্সিল গত ২৬ জুলাই এক অফিসিয়াল নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় ২৬ সেপ্টেম্বর কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সাপেক্ষে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
ফলে এমন শর্ত জোড়ানো নোটিশ দেখে আন্দোলনরত শিক্ষানবীশরা সঙ্গত কারনেই ধরে নিয়েছিল নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা হচ্ছেনা। আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্যই কৌশলে এই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে এটা অনেকের মত। আসলে ঘোষিত তারিখে লিখিত পরীক্ষা নিতে না পেরে পরীক্ষাকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত করেছে বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষানবিশ আইনজীবীরাও তো এদেশের সন্তান, নাগরিক। কাজেই বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী মৌলিক অধিকার পুরোপুরি প্রাপ্য হকদার। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা আছে।
তা নিম্নরুপঃ- রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়:
(ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা
(খ) কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার
(গ) যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার এবং
(ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্যলাভের অধিকার৷
উল্লেখিত সাংবিধানিক অধিকার পুরোপুরি পাওয়ার হকদার এই শিক্ষানবিশ আইনজীবীরাও। দেশের চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে সঠিক সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সম্ভব না হওয়ায় PSC,JSC,HSC তে অটোপাশ দিয়েছে সরকার। এসব তো এ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট কিন্তু পেশাগত সার্টিফিকেট আরো জরুরী। আইনে স্নাতক,মাস্টার্স কিংবা বিদেশ থেকে বার এ্যাট ল কমপ্লিট করে আজ আইনের শিক্ষার্থীরা পেশাগত সার্টিফিকেট পেতে আরো বেশি হকদার। যেহেতু করোনা বিবেচনায় এ্যাকাডেমিক প্রমোশন দেওয়া হয়েছে সেহেতু পেশাগত সনদ প্রমোশন আরো বেশি সাংবিধানিক অধিকার শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের।