ধর্ষণঃ সংজ্ঞায় রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা ২(ঙ) “ধর্ষণ” অর্থ: ধারা ৯ এর বিধান সাপেক্ষে, Penal Code, 1860 (Act XLV of 1860) এর Section 375 এ সংজ্ঞায়িত “rape”
তাহলে ধর্ষণ কাকে বলে বা কখন কোন কাজকে ধর্ষণ বলা হয়, তা জানতে হলে আমাদের পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৭৫ ধারা এবং প্রথমোক্ত আইনের ৯ ধারার ব্যাখ্যা জানতে হবে।
পেনাল কোড ধারা ৩৭৫
নারী ধর্ষণঃ যদি কোন ব্যক্তি, অতপর ব্যতিক্রান্ত ক্ষেত্র ব্যতিরেকে নিম্নোক্ত পাঁচ প্রকার বর্ণনাধীন যেকোন অবস্থায় কোন নারীর সাথে যৌন সহবাস করে, সে ব্যক্তি “নারী ধর্ষণ” করে বলে গণ্য হবে।
প্রথমতঃ তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে,
দ্বিতীয়তঃ তাঁর সম্মতি ব্যতিরেকে,
তৃতীয়তঃ তাঁর সম্মতিক্রমে, যেক্ষেত্রে তাঁকে মৃত্যু বা আঘাতের ভয় দেখিয়ে তাঁর সম্মতি আদায় করা হয়।
চতুর্থতঃ তাঁর সম্মতিক্রমে, যেক্ষেত্রে লোকটি জানে যে, সে তাঁর স্বামী নহে এবং নারীটি এ বিশ্বাসে সম্মতি দান করে যে, পুরুষটি এমন কোন লোক যার সাথে সে আইনানুগভাবে বিবাহিত অথবা সে নিজেকে তার সাথে আইনানুগভাবে বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে।
পঞ্চমতঃ তাঁর সম্মতি সহকারে বা ব্যতিরেকে, যেক্ষেত্রে সে চৌদ্দ বৎসরের কম বয়স্ক হয়।
ব্যাখ্যাঃ অনুপ্রবেশই নারী ধর্ষণের অপরাধরুপে গণ্য হবার যোগ্য যৌন সহবাস অনুষ্ঠানের নিমিত্ত যথেষ্ট বিবেচিত হবে।
ব্যতিক্রমঃ কোন পুরুষ কর্তৃক তার স্ত্রী যৌন সহবাস, স্ত্রীর বয়স তের বৎসরের কম না হলে, নারী ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা ৯ এর ব্যাখ্যাঃ
যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলক ভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।
পেনাল কোড এ বর্ণিত সংজ্ঞানুসারে প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর সম্মতিক্রমে যৌন সহবাস ধর্ষণ হিসেবে গণ্য না, যদি সে সম্মতি মৃত্যু বা আঘাতের ভয় দেখিয়ে আদায় করা না হয়।
ফলে প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর সম্মতিক্রমে যৌন সহবাস করা হলে পুরুষটির রেহাই পাওয়ার একটি সুযোগ ছিল। এ সুযোগের একটা বাস্তবতা ও যুক্তিগ্রাহ্য প্রেক্ষাপট রয়েছে। কেননা, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী: পরিণাম, পরিণতি বা ফলাফল ইত্যাদি বুঝে, শুনে, স্বেচ্ছায় সম্মতি দান করে থাকেন।
কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর উপরোক্ত ব্যাখ্যার আলোকে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী প্রথমত জেনে, বুঝে, ফলাফল সম্পর্কে অবগত হয়ে সম্মতিদান করে যৌন সহবাসে লিপ্ত হয়ে অতপর সময় বুঝে “প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করা হয়েছে” দাবী করে যেকোন সময় পুরুষটির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনতে সক্ষম। অথচ প্রাপ্ত বয়স্ক, শিক্ষিত, বুঝদার, সমঝদার, জ্ঞানী, নিজের ভাল-মন্দ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম নারী স্বেচ্ছায় যৌন সহবাসে অংশ গ্রহণ করে যেকোন সময়ে পুরুষকে বিপদে ফেলার দারুণ একপেশে সুযোগ পেয়ে বসে আছে। এটাই বৈষম্য। প্রতিনিয়ত অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা যেখানে পুরুষকে ফাঁসানোর জন্য নারী দাবী করছে যে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে তাঁর সম্মতি আদায় করা হয়েছে। যে নারী বিয়ের প্রলোভন দেখালে বিছানায় যেতে বা যৌন সহবাসে সম্মতি দান করে তাকে এখনো সমাজের লোকেরা খুব বেশী ভাল চোখে দেখেন না। তথাপিও এমন নারী, এমনকি পেশাদার পতিতা, যাকে টাকার বিনিময়ে শয্যাসঙ্গী করা হয়, তিনিও দাবী করার সুযোগ পাচ্ছেন যে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে প্রতারণা মূলকভাবে সম্মতি আদায় করা হয়েছে। একজন পুরুষ ৫০০/- টাকা চুক্তিতে কোন নারীর সাথে যৌন সহবাস করলে সহবাস শেষে তাকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত করা যায়। হচ্ছেও তাই। অসংখ্য নারী আপোষে বা অর্থ বা অন্যকোন সুবিধার বিনিময়ে পুরুষের শয্যাসঙ্গীনী হয়ে এক পর্যায়ে পুরুষটির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করছেন।
মৃত্যু বা আঘাতের ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্মতি আদায়ের দাবী প্রমাণ করতে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণের যথার্থতা থাকলেও “বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েছে” এটা প্রমাণ খানিকটা বায়বীয় বা অজুহাত বিশেষ। কেননা- কবে, কোথায়, কার মোকাবেলায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েছে তা মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার আগেই পুরুষের হাজতবাস কয়েক মাস বা বছর পার হয়ে যায়। ধর্ষণের সংজ্ঞায় বৈষম্য থাকায় মোক্ষম অস্ত্র দুষ্ট নারীর হাতে। যদিও এ অস্ত্র সম্ভ্রান্ত, সদবংশীয়, সুশীল, আত্মমর্যাদাশীল ও সমাজের সম্মানী নারী কখনো ব্যবহার করেন না।
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড হওয়া স্বাভাবিক।
কিন্তু অসৎ চরিত্রের নারীর হাতে এতবড় শাস্তির দাবী বা ভূয়া অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ থাকা নিরাপদ ও বাঞ্চনীয় নয়। বরং মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ। অসংখ্য পুরুষের সামাজিক নিরাপত্তা কেড়ে নিয়ে হয়রানী করতে উৎসাহিত হচ্ছে উশৃঙ্খল ও অসৎ চরিত্রের কতিপয় নারী।
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার পাশাপাশি ধর্ষণের সংজ্ঞায় থাকা বৈষম্য বিলোপ করাও জরুরী।