- চট্টগ্রাম অফিস : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেল স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য ত‚র্ণা নিশীথার চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে দায়ী করা হয়েছে। কারণ দুর্ঘটনার সময় চালক ও সহকারী চালক ঘুমে ছিলেন। পাশাপাশি ত‚র্ণার পরিচালকেরও দায়িত্বে অবহেলা ছিল। এ দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ওই দুর্ঘটনার কারণ, দায়ী কারা এবং কিছু সুপারিশসহ ৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামছুজ্জামানের কাছে জমা দেয় তদন্ত কমিটি।
বিভাগীয় পর্যায়ের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও পূর্বাঞ্চল রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেয়ার শেষ সময় থাকলেও তা জমা দেয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার আবারো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন ডিজির কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী ও ডিজি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করবেন।
নাসির উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করার জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ১৭ জনের বক্তব্য গ্রহণ এবং দুর্ঘটনার যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। ট্রেনের গতি কত ছিল? সিগন্যালের সিটিউশন কী রকম ছিল? দুই পাশের স্টেশন মাস্টারের কিছু গোপন নম্বর থাকে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা লাইন ক্লিয়ার দেন, ওই নম্বরগুলো আমরা যাচাই করেছি।
পূর্বাঞ্চল রেলের একটি সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য ত‚র্ণা নিশীথার ট্রেনচালক তাছের উদ্দিন ও সহকারী চালক অপু দে’কে দায়ী করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী করা হয়েছে গার্ড আবদুর রহমানকে। দুই চালকই ঘুমে ছিলেন, এ বিষয়ে কমিটি নিশ্চিত হয়েছে। কুয়াশা ও মাটির স্ত‚পের জন্য স্টেশনের সিগন্যাল দেখতে পাননি বলে চালকরা যে দাবি করেছেন, তদন্তে তার সত্যতা মেলেনি। দুর্ঘটনারোধে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ট্রেনে ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানো- যার মাধ্যমে সিগন্যাল ডেঞ্জার থাকা অবস্থায় চালক যদি কোনো কারণে হিউম্যান ফল্ট করেন তাহলেও কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না। সিগন্যাল দেখে ট্রেন অটোমেটিক থেমে যাবে। এ ছাড়া ট্রেনে শক্তিশালী মোবাইল ডিভাইস ও গোপন নম্বর ব্যবহার করা, যা প্রতিটি ট্রেনের জন্য আলাদা থাকবে। এতে করে ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা সহজ হবে।
মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কংক্রিট বা বালুর কারণে ত‚র্ণার চালকের সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডাবল লাইনের কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা সর্বোচ্চ সিকিউরিটি মেইনটেইন রক্ষা করে কাজ করেছেন। কংক্রিট বা বালুর স্ত‚প করে রাখার কারণে সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ার বিষয়ে চালকের যে দাবি, তা ঠিক নয়। তিনি বলেছেন, ট্রেনের সম্পূর্ণ ব্রেকিং দূরত্ব ৪৪০ গজ। চালকের ব্রেক ধরার জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া জবানবন্দিতে ট্রেনচালক তাহের উদ্দিন বলেছেন, সহকারী চালক অপু দে’কে নিয়ে রাত পৌনে ১২টায় তারা চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়েন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশাও বাড়তে থাকে। মন্দবাগ স্টেশনের মুখে এসে ওই এলাকায় মাটির স্ত‚প ও একাধিক লাইট থাকায় তিনি সিগন্যাল লক্ষ্য করতে পারেননি। পরে ডেনজার সিগন্যাল দেখে হতভম্ব হয়ে যান। এ সময় ইমার্জেন্সি ব্রেক চাপেন। কিন্তু এরপরও ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এ সময় যান্ত্রিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন, এয়ার ব্রেক করা হলে ১০ সেকেন্ডে ট্রেন থেমে যায় এবং সর্বোচ্চ ১০ মিটার পর্যন্ত সামনে যেতে পারে ট্রেনটি। কিন্তু চালক যদি এয়ার ব্রেক চেপেই থাকেন, তবে কেন এরপরও ট্রেনটি ৭৪০ মিটার পর্যন্ত গেল? তবে এর কোনো উত্তর দিতে পারেননি তাছের উদ্দিন।