ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে নূর তাপস এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইশরাক হোসেনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইশরাকের চেয়ে সম্পদ বেশি তাপসের।
তাপসের হলফনামায় যা আছে
৪৮ বছর বয়সী (জন্ম ১৯ নভেম্বর ১৯৭১) শেখ ফজলে নূর তাপস সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত। ২০০২ ও ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হলেও হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেয়। শেখ ফজলুল হক মণি ও শামছুন্নেছা আরজু মণির ছেলে তাপস ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি।
আয়ের উৎস
কৃষি খাতে ৩৫ হাজার টাকা; বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ায় ৪২ লাখ ৫০ হাজার ৩৯৮ টাকা; শেয়ার-সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৮ টাকা; আইন পেশায় প্রার্থীর বার্ষিক আয় ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও চাকরি বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় কৃষি খাতে ২২ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি ভাড়ায় ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮২ টাকা, ব্যবসায় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮৮ টাকা ও আমানত ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ১২২ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ
নগদ অর্থের মধ্যে তাপসের নিজের নামে ২৬ কোটি তিন লাখ তিন হাজার ৫৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৯৭ লাখ ২০৬ টাকা রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণে নিজের নামে ৩৭৫০ ইউএস ডলার, স্ত্রীর নামে ৮৭০০ ইউএস ডলার থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমাণ এক কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে দুই কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার ২৩৫ টাকা।
বন্ড এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে তাপসের নিজের ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।
সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫ কোটি ২২ লাখ টাকার; স্ত্রীর রয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি।
নিজের এবং স্ত্রীর ৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের গাড়ি রয়েছে। তাদের দুই জনের দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার, ১০ লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী, পরিবারের ১৭ লাখ টাকার আসবাবপত্রের তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে হলফনামায়।
অস্থাবর সম্পদ একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়ের চেয়ে ব্যাংকে জমা ও আমানতে বিনিয়োগ কমেছে। তবে দশম সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেড়েছে।
স্থাবর সম্পদ
তাপসের নিজের সাড়ে ১০ কাঠা ও স্ত্রীর ১১২ শতাংশ (৬ কোটি ৬৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬২০ টাকা মূল্যের) কৃষি জমি; ১০ কাঠা (৩৮ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকার মূল্যমানের) অকৃষি জমি ও স্ত্রীর নামে ১০ কাঠা (পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ২৪০ হাজার টাকার মূল্যের) অকৃষি জমি রয়েছে।
৮ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ টাকার মূল্যমানের আবাসিক/বাণিজ্যিক দালান রয়েছে তিনটি; স্ত্রী এবং নিজের নামে পৌনে চার কোটি টাকা মূল্যের তিনটি বাড়ি/ অ্যাপার্টমেন্ট।
অবশ্য বাড়ি ভাড়া বাবদ অগ্রিম নেওয়া ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা দায়-দেনা উল্লেখ করেন তিনি।
এনবিআরের জারি করা গেজেট অনুযায়ী, আইনজীবীদের মধ্যে টানা কয়েকবছর সেরা করদাতা সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এই শ্রেণিতে অন্য সেরা করদাতারা হলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, আহসানুল করিম, কাজী মোহাম্মদ তানজীবুল আলম ও মুহাম্মদ কবির উজ্জামান ইয়াকুব।
ইশরাকের হলফনামায় যা আছে
বিএনপি প্রার্থী ৩৩ বছর বয়সী ইশরাক হোসেন (জন্ম ৫ এপ্রিল ১৯৮৭) ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও ইসমত আরার ছেলে।
ইশরাকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং), পেশা ব্যবসা। তিনি সাদেক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বুড়িগঙ্গা ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, দিগন্ত প্রকৌশলী লিমিটেডের পরিচালক। ডাইনামিক স্টিল কমপ্লেক্স লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার এবং ট্রান্স ও শিয়ানিক ট্রেডিংয়ের মালিক ইশরাক। ইশরাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলা বিচারাধীন।
আয়ের উৎস
বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ৭৮ হাজার ৩০০ টাকা; ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা; শেয়ার/আমানতের সুদ ৪ লাখ ২৫ হাজার ৮২৪ টাকা; চাকরি থেকে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ টাকা; অন্যান্য আয় ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৯ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ
নগদ অর্থ ৩৩ হাজার ১০৯ টাকা; ব্যাংক এবং আর্থিক খাতে তার জমাকৃত টাকার পরিমাণ এক কোটি ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৩ টাকা; শেয়ারবাজারে দুই কোটি ৯৬ লাখ টাকা; পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৪২ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা; এক লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী এবং এক লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকার আসবাবপত্র এবং অন্যান্য ২০ লাখ ২৪ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।
স্থাবর সম্পদ
৩০ লাখ ২৫ হাজার ৬৫০ টাকা মূল্যের ৩৪.৫০ শতাংশ কৃষি জমি; ৩২ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ২৯.০৯ শতাংশ অকৃষি জমি; আবাসিক ও বাণিজ্যিক এবং অ্যাপার্টমেন্ট মিলিয়ে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে।
মায়ের কাছে ৬১ লাখ টাকার ঋণের সঞ্চিতি ও ক্রেডিট কার্ড, স্বল্প মেয়াদী ঋণ মিলিয়ে ইশরাকের দেনার পরিমাণ ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ টাকা।
উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের পাশাপাশি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৬০ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০২ জন (মোট ৫৬৯ জন) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।