আমতলীতে কলেজছাত্রী মালা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামির মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন ও একজনের সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন প্রধান আসামি ছাত্রীর কথিত প্রেমিক আলমগীর হোসেন পলাশ এবং দুই নম্বর আসামি অ্যাডভোকেট মাঈনুল আহসান তালুকদার বিপ্লব ও তার সহকারী রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ। একইসঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়। চার নম্বর আসামি বিপ্লবের স্ত্রী ইমা রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। রোববার বিচারক হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জানান, কলেজছাত্রী মালাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করার দায়ে পলাশের মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং লাশ সাত টুকরো করার অপরাধে আরও সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মালাকে ধর্ষণের অভিযোগে অ্যাডভোকেট বিপ্লবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং সাত টুকরো লাশ গোপন করার অভিযোগে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাত টুকরো লাশ গোপন করার দায়ে আসামি রিয়াজকে সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পলাশ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বাসণ্ডা গ্রামের প্রয়াত লতিফ হাওলাদারের ছেলে। এ ছাড়া বিপ্লব ও তার স্ত্রী ইমা রহমান এবং রিয়াজ আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার গুদিঘাটা গ্রামের আব্দুল মন্নান খানের মেয়ে এবং কলাপাড়া মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মালার সঙ্গে জেলার ঘটবাড়িয়া আদর্শ কলেজের প্রভাষক আলমগীর হোসেন পলাশের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সাত বছর আগে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে মালার সঙ্গে পলাশের পরিচয়। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর মালাকে নিয়ে পলাশ তার ভাগ্নিজামাই আমতলীর হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট বিপ্লব তালুকদারের বাসায় বেড়াতে আসে। ২৪ অক্টোবর সকালে বিপ্লবের স্ত্রী তার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যান। এরপর মালাকে ধর্ষণ শেষে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পলাশ। পরে মরদেহ সাত টুকরো করে ড্রাম ভরে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে সে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ড্রাম থেকে মালার খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার এবং পলাশকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় ওই দিনই পুলিশ আমতলী থানায় হত্যা মামলা করে। ঘটনার পরের দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় পলাশ। তদন্ত শেষে পুলিশ এ মামলায় পলাশ, বিপ্লব, রিয়াজ ও বিপ্লবের স্ত্রী ইমা রহমানকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২৫ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে রোববার আদালত রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও আসামি পক্ষের আইনজীবী হুমায়ূন কবির জানান, তারা এ রায়ে সন্তুষ্ট নন। তাই তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।