১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ধারা ৩২(১) উপধারায় মৃত্যুকালীন ঘোষণা সম্পর্কে বিধান রয়েছে। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মৃত্যু বা নিখোঁজ ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে তাঁর বিবৃতি সেসব ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। মৃত্যুকালীন ঘোষণার সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত উপাদানগুলো দেখা যায়; যথা—
১. বিবৃতিদানকারী ব্যক্তির মৃত্যুবরণ করতে হবে,
২. উল্লিখিত বিবৃতিটি মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে হতে হবে,
৩. উল্লিখিত অবস্থা বা ঘটনার ফলে তার মৃত্যু হতে পারে,
৪. বিবৃতিদানকারীর মৃত্যু বিচার্য বিষয় হতে হবে,
৫. বিবৃতিদানকারীর বিবৃতি দেওয়ার যোগ্য হতে হবে।
মূলত উপরোল্লিখিত পাঁচটি উপাদানের সমন্বয়েই মৃত্যুকালীন ঘোষণার সংজ্ঞা গঠিত।মৃত্যুকালীন ঘোষণার উপাদানগুলো যদি কেউ পূরণ করে, তবে সেই পরিস্থিতিতে মৃত্যুকালীন ঘোষণা গ্রহণযোগ্য।
সাধারণত পুলিশের কাছে দেওয়া অপরাধ সংঘটনসংক্রান্ত কোনো বিবৃতি সাক্ষ্য আইনে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে মৃত্যুকালীন ঘোষণা এই সাধারণ নীতির ব্যতিক্রম। মৃত্যুকালীন ঘোষণা লিখিতও হতে পারে, আবার মৌখিকও হতে পারে। এ ঘোষণা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী লিখিত হওয়ার কোনো বিধান নেই। মৃত্যুকালীন ঘোষণা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে করা যায়, পুলিশের কাছে, এমনকি সাধারণ ব্যক্তির কাছেও করা যায়। উল্লেখ্য, যার কাছেই করা হোক না কেন, ৩২(১) উপধারার শর্তগুলো পূরণ করতে হবে। ৪২ ডিএলআর (আপিল বিভাগ) ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, সাক্ষ্য সম্মুখে পাওয়া যেকোনো লোক লিপিবদ্ধ করতে পারে, তা লিখিত বিধান নেই যে এটা অপরাধ সম্পর্কীয় আইনের ১৬৪(৩) ধারার মতোই ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া অন্যত্র উল্লেখ রয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তার রেকর্ডকৃত মৃত্যুকালীন ঘোষণা সাক্ষ্য আইনে গ্রহণীয়, কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকবে যে বাদী পক্ষের কাছে এটা অপেক্ষা ভালো পদ্ধতিতে ঘোষণা রেকর্ডের কোনো সময় বা সুযোগ ছিল না। তবে এ কথা ঠিক নয় যে পুলিশ কর্মকর্তার রেকর্ডকৃত মৃত্যুকালীন ঘোষণা অনির্ভরযোগ্য।
